সময়ের সাথে সবকিছুই পরিবর্তনশীল। একটা সময় ছিল যখন বিজ্ঞাপন দেয়ার জন্য ব্যবহার করা হতো কার্ড,লিফলেট, ব্যানার, পোস্টার, রেডিও, টিভি সহ নানান ধরনের পন্থা। সবকিছুই এখন ডিজিটাল হয়ে যাচ্ছে।তারাই এগিয়ে রয়েছে যারা সময়ের সাথে সাথে নিজেদের উন্নতির ধারা অব্যাহত রেখেছে।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর অনেকটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে ফেসবুক মার্কেটিং। দিন শেষে যাই বিক্রি করেন না কেন তার কাস্টমার অবশ্যই ফেসবুকে আছে। তাদেরকে মার্কেটিং করার জন্য বা তাদেরকে টার্গেট করার জন্য ফেসবুক একটা দারুন প্ল্যাটফর্ম।

ফেসবুক মার্কেটিং কি? কিভাবে ফেসবুক মার্কেটিং করবেন?
ফেসবুক মার্কেটিং



বর্তমানে ফেসবুকে প্রায় ২.৯২ বিলিয়ন এর ও বেশি ব্যবহারকারি আছে। তাই ফেসবুকের মাধ্যমে মার্কেটিং করলে, আপনি অনেক বেশি গ্রাহকের কাছে দ্রুত আপনার প্রোডাক্টের মার্কেটিং করতে পারবেন। এছাড়া ফেসবুকের মাধ্যমে মার্কেটিং করলে অনেক দ্রুত কাস্টমার দের কাছে রিচ করা যায়।



আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনি যা যা জানতে পারবেনঃ


  • ‌ফেসবুক মার্কেটিং কি? 

  • ‌কেন ফেসবুক মার্কেটিং করা প্রয়োজন? 

  • ‌কিভাবে ফেসবুক মার্কেটিং করবেন? 



ফেসবুক মার্কেটিং কি? 


ফেসবুক একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। যার মাধ্যমে আমরা দ্রুত এবং সহজেই তথ্য আদান প্রদান করতে পারি। জনপ্রিয় অন্য সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের চাইতে ফেসবুক সবচেয়ে পরিচিত,ও বহুল জনপ্রিয় একটি প্ল্যাটফর্ম।


ফেসবুক মার্কেটিং হলো এমন একটি পন্থা যার মাধ্যমে আপনার ব্যবসার পন্য বা সেবার ব্যাপারে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের জানান দেয়া হয়ে থাকে। ফেসবুক মার্কেটিং এর উদ্দেশ্য হলো বেশি পরিমান লোকের সামনে আপনার ব্যাবসার পণ্য বা সেবা সম্পর্কে তুলে ধরা। কেনো ফেসবুক মার্কেটিং করা প্রয়োজন?  


শুরুর দিকের সময়ে ফেসবুক মার্কেটিং অনেক ধীর গতিতে চালু হলেও বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং সেক্টরের মধ্যে ফেসবুক মার্কেটিং কে অন্যতম বলা হয়ে থাকে। শুধুমাত্র ফেসবুকে প্রচার প্রচারণা করেই অনেক ছোট-বড় প্রতিষ্ঠান সফল হয়ছে।  


ফেসবুক মার্কেটিং এর গুরুত্ব অনেক বেশি যার কারণে ফেসবুকে মার্কেটিং করা প্রয়োজন। কেননা এর মাধ্যমে দ্রুত এবং সহজেই টার্গেটেড কাস্টমার এর কাছে পন্য বা সেবা পৌঁছে দেয়া সম্ভব। ফেসবুক এমন একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেখানে আমার সবারই কমবেশি একাউন্ট রয়েছে।


আপনি ফেসবুক মার্কেটিং করতে আগ্রহী তাহলে অবশ্যই আপনার একটি ফেসবুক একাউন্ট এর প্রয়োজন রয়েছে। বর্তমানে আমাদের দেশে প্রায় ৮ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এবং প্রায় চার কোটি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে। আর এ সময় পণ্য প্রচার বা আপনার ব্যবসা কে বৃদ্ধি করতে ফেসবুক মার্কেটিং হলো সেরা একটি মাধ্যম।



কিভাবে ফেসবুক মার্কেটিং করবেন 


প্রত্যেকটা বিষয়ে সব থেকে ভাল ফলাফল পেতে হলে আমাদের কে সঠিক নিয়ম অনুসরন করতে হয়। অন্যথায় আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া সম্ভব হয় না। তেমনি ফেসবুক মার্কেটিং এ সব থেকে ভাল ফলাফলের জন্য ফেসবুক মার্কেটিং করার সময় সঠিক ভাবে মার্কেটিং করতে হবে।  অন্যথায় আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া মুশকিল। 


ফেসবুক মার্কেটিং সাধারণত দুই প্রকার। 


১। ফ্রি ফেসবুক মার্কেটিং। 

২। পেইড ফেসবুক মার্কেটিং। 

সাধারণত ব্যাবসার ধরণ অনুযায়ী ফ্রি অথবা পেইড ফেসবুক মার্কেটিং করা হয়। 


ফ্রি ফেসবুক মার্কেটিং করার উপায় 


ফ্রিতে ফেসবুক মার্কেটিং বলতে আমরা বুঝি যে, কোনরকম টাকা পয়সা খরচ না করেই মার্কেটিং করা। একটি পোর্টাল থেকে জানা গেছে যে ৯০% শতাংশ মানুষ ফ্রিতেই মার্কেটিং করে থাকে।  বাকি ১০% শতাংশ মানুষ যারা প্রফেশনালি কাজ করে তারা পেইড ক্যাম্পেইন বা পেইড প্রোমোশন করে মার্কেটিং করে থাকে। 


আপনি ফেসবুকে দুইভাবে মার্কেটিং করতে পারবেন।  একটি হলো ফেসবুক পেজের মাধ্যমে। অন্যটি হলো ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে। পেজ ও গ্রুপের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে যে, কোনটা দিয়ে মার্কেটিং শুরু করা উচিৎ? পেজ নাকি গ্রুপ?


আমার মতে দুটো দিয়েই শুরু করা উচিৎ। আমরা জানি, পেজের মধ্যে সবাই লাইক কমেন্ট করতে পারে। কিন্তু অন্যকেউ চাইলেও আপনার পেজে পোস্ট করতে পারবে না। অর্থাৎ পেজ হলো ওয়ানওয়ে তে কমিউনিকেশন এর জন্য।  


কিন্তু একটি গ্রুপের ক্ষেত্রে, সবাই সেখানে পোস্ট এর মাধ্যমে নিজেদের মন্তব্য তুলে ধরতে পারে। জার ব্যাপার হলো যে, পেজে লাইক বাড়ানো থেকে গ্রুপে মেম্বার যোগ করা অনেক সহজ। তাই গ্রুপে আপনার কাষ্টমাররা চাইলেই তাদের মতামত তুলে ধরতে পারবে। এখন আপনার প্রোডাক্ট কোয়ালিটি বা সেবার মান যদি ভাল হয় তাহলে আপনার কাস্টমার থেকে পাওয়া রিভিউ গুলো আপনার মার্কেটিং করতে অনেক সাহায্য করবে।  আপনি চাইলে আপনার গ্রুপটি রিভিউ বা সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যবহার করতে পারেন।


আপনি আপনার পেজ ও গ্রুপের জন্য লোগো, কভার ফটো, সহ অন্যান্য ইনফরমেশন যেমন যোগাযোগ করার প্রক্রিয়া সঠিকভাবে ব্যবহার করে গ্রুপে ও পেজে আপনার পন্য বা সেবা সম্পর্কে পোস্ট করতে পারেন। এছাড়াও আপনি অন্যান্য সকল পেজ বা গ্রুপেও আপনার প্রোডাক্ট বা সেবার প্রচার করতে পারেন। এ ধরণের প্রচার প্রক্রিয়া পরিচালনা করে আপনি কোনরকম অর্থ ছাড়াই ফেসবুকে মার্কেটিং করতে পারবেন। আর এই প্রক্রিয়াকেই বলা হয় ফ্রি ফেসবুক মার্কেটিং। 



পেইড ফেসবুক মার্কেটিং 


আপনি হয়তো বিভিন্ন সময় দেখে থাকবেন যে কিছু পোস্ট এর নিচে ছোট করে sponcered লেখা থাকে। এই সকল পোস্ট সাধারনত পেইড মার্কেটিং করে করা হয়। ছোট মাঝারি এবং অনেক বড় বড় ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কাস্টমারের কাছে পন্যের মার্কেটিং করার জন্য ফেসবুকে বুস্ট বা মার্কেটিং করে থাকে। 


আপনার যদি কোন পেজ থাকে তাহলে পেজের পোস্ট পাবলিশ করার পর নিচে দেখতে পারবেন যে বুস্ট নামের একটি অপশন রয়েছে। আপনি যদি আপনার ফেসবুক পেজের কোন কনটেন্ট, পন্য অথবা কোন সেবা অর্থ ব্যায় করে মার্কেটিং করতে চান। তাহলে, ফেসবুকের এই বুস্ট অপশন টি ব্যবহার করে ফেসবুক মার্কেটিং করতে পারবেন। 




ফেসবুকের বুস্ট সেবা টি ব্যবহার করে আপনি চাইলে নির্দিষ্ট বয়স নির্বাচন করতে পারবেন। এছাড়া আপনি পুরুষ বা মহিলা আলাদা আলাদা ভাবে নির্বাচন করে মার্কেটিং করতে পারবেন। একই সাথে আপনি একটি নির্দিষ্ট অংশ বা এলাকা বা শহড়েও মার্কেটিং করতে পারবেন বা আপনি চাইলে পুরো একটি দেশেও আপনার পণ্য বা সেবার জন্য মার্কেটিং করতে পারবেন। তবে  বুস্টিং সার্ভিস ব্যবহার এর সব থেকে বড় সুবিধা হলো আপনি দেখতে পারবেন আপনার নির্বাচন করা এলাকা জুড়ে গ্রাহকের সংখ্যা।


পেইড মার্কেটিং করার কিছু সুবিধাঃ


  • সহজেই গ্রাহক কে খুজে বের করে পণ্য বা সেবার মার্কেটিং করা যায়।

  • দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রাহকের সামনে পণ্য ও সেবা উপস্থাপন করা যায়।

  • পুরুষ ও মহিলা নির্বাচন করে আলাদা আলাদা ভাবে মার্কেটিং এর সুবিধা পাওয়া যায়।

  • একটি নির্দিষ্ঠ অঞ্চল, শহড় ও দেশে পণ্য ও সেবার মার্কেটিং করা যায়।

  • এছাড়াও বয়স নির্বাচন করে মার্কেটিং করা যায়।





আমাদের শেষকথা 


ডিজিটাল মার্কেটিং এর মধ্যে ফেসবুক মার্কেটিং খুবই কার্যকরী একটি মাধ্যম। ফেসবুকের জনপ্রিয়তা ও এর বিশাল সংখ্যক ব্যবহারকারীদের সাথে মার্কেটিং করলে আপনি আপনার পণ্যটি সঠিক ভাবে আপনার গ্রাহকের সামনে তুলে ধরতে পারবেন। এছাড়া যদি আপনার প্রতিষ্ঠান বা স্টোর টি অনলাইন বেজড হয়ে থাকে তাহলে ফেসবুক মার্কেটিং এর বিকল্প নেই। 


বর্তমানে একটি অনলাইন স্টোর বা প্রতিষ্ঠানের পন্যের মার্কেটিং করার জন্য বেশিরভাগই ফেসবুক কে পছন্দ করে। কেননা সহজেই গ্রাহক পাওয়া যায় পাশাপাশি এখানে পণ্যের প্রচার ও প্রচারনা করলে পণ্যের সাথে সাথে আপনার ব্র্যান্ড এর ভ্যালু ও বৃদ্ধি হয়। একটি নতুন বা পুরাতন প্রতিষ্ঠান কে সফলভাবে পরিচালনা করতে হলে বর্তমানে মার্কেটিং করার বিকল্প নেই।