বাইপোলার ডিসঅর্ডার সম্পর্কে জানতে চান? জেনে নিন এর লক্ষণ এবং সমস্যার কারণসমূহ।


বাইপোলার ডিসঅর্ডার হলো একটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যা মানসিক দুশ্চিন্তার সাথে একটি মনোস্থিরতার স্থিতির মধ্যে পর্যবর্তিত হয়। কখনও খুব বেশি আনন্দিত আবার কখনো খুব বেশি বিষণ্ণ হয়ে থাকেন এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা। 

সহজ ভাষায়, অনেক দীর্ঘসময় ধরে একজন ব্যাক্তির মুড, আবেগ বা মানসিক অবস্থার বিপরীতমুখী পরিবর্তন লক্ষ্য করলে বিশেষজ্ঞরা একে বাইপোলার ডিসঅর্ডার বলে বর্ণনা করেন।



প্রিয় পাঠক, আপনি যদি গভীরভাবে বাইপোলার ডিসঅর্ডার সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে এই ব্লগ টি সম্পূর্ণ পড়ে জেনে নিন এর লক্ষণ এবং সমস্যার কারণসমূহ। এই ব্লগে আমরা বাইপোলার ডিসঅর্ডার সম্পর্কে বিস্তারিত খুঁটিনাটি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক। 



এই ব্লগে আপনি যা যা জানতে পারবেন :-


  • বাইপোলার ডিসঅর্ডার কি

  • বাইপোলার ডিসঅর্ডার কেন হয়

  • বাইপোলার ডিসঅর্ডারের লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?

  • বাইপোলার ডিসঅর্ডার থেকে সম্পূর্ণ মুক্তির উপায়

  • বাইপোলার ডিসঅর্ডার সমস্যার চিকিৎসা 


ডায়াবেটিসের মতো কঠিন-তম রোগের মধ্যে একটি হলো বাইপোলার ডিসঅর্ডার। ঔষধ ও চিকিৎসার মাধ্যমে রোগটি কে নিয়ন্ত্রণে রাখা গেলেও পুরোপুরি সুস্থ হওয়া যায় না এই রোগ থেকে। 



বাইপোলার ডিসঅর্ডার কী?


বাইপোলার ডিসঅর্ডার হলো একজন ব্যাক্তির মানসিক অসুস্থতা। অন্য-শব্দে এই রোগটি কে ম্যানিক ডিসঅর্ডার বলা হয়ে থাকে। সাধারণত এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি  দ্রুত মেজাজ হারিয়ে ফেলেন। এতে সেই ব্যক্তি হঠাৎ অনেক বেশি খুশি হয়ে যায় আবার কখনও কখনও অত্যধিক হতাশায় চয়ে যায়। 


এমন ও হয়ে থাকে যে, কিছু কিছু মানুষ হতাশার কারণে আত্মহত্যা ও করার চিন্তা করে থাকে। আবার অনেকেই আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মনে আত্মবিশ্বাসের অনেক কমতি থাকে। 



বাইপোলার ডিসঅর্ডার কেন হয়?


সঠিক কি কারণে বাইপোলার ডিসঅর্ডার হয়ে থাকে তা এখনো জানা যায়নি চিকিৎসা বিজ্ঞান থেকে। তবে, এই সমস্যার পেছনে কিছু উপাদান কাজ করে বলে ধারণা করেন অভিজ্ঞরা। 


অধ্যাপক ডাঃ মেষলা সরকার এই বিষয়ে বলেন, অনেকসময় বাইপোলার ডিসঅর্ডার জেনেটিক্যাল বা বংশগত সমস্যার কারণে দেখা দেয়। তরুণ বয়সে এই রোগের প্রকাশ দেখা যায় বলে তিনি জানিয়েছেন। 



নারী ও পুরুষ উভয়েরই এই রোগ হতে পারে। তবে লক্ষণ ভিন্ন হতে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন। এছাড়াও বিশেষ করে মস্তিষ্কে সেরটোনিন,  ডোপামিন, নরঅ্যান্ড্রেনালিন, ইত্যাদি এবং নিউরোট্রান্সমিটারের ভারসাম্যহীনতা, স্নায়ুবিকাশজনিত সমস্যা, মানসিক রোগের ভুল চিকিৎসা ইত্যাদির কারণে বাইপোলার ডিসঅর্ডার হতে পারে। 



বাইপোলার ডিসঅর্ডারের লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?

বাইপোলার ডিসঅর্ডার লক্ষণ ও উপসর্গ নিয়ে আলোচনার পূর্বে আপনার জানা উচিৎ। যেহেতু বাইপোলারে আক্রান্ত ব্যক্তিরা দুই ধরনের আচরণ প্রকাশ করে সেহেতু এই রোগের লক্ষণ ও আচরণ ভেদে দুই প্রকার হয়ে থাকে। তবে একই ব্যাক্তির সময়ের ব্যবধানে এরকম আচরণ প্রকাশ পেলে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।

ম্যানিয়া এপিসোড 

  • অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ, অতি উৎফুল্ল মনোভাব।

  • অতিরিক্ত কথা বলা এবং খাবারে অনীহা। 

  • অতিরিক্ত আনন্দে থাকা এবং শত্রুতায় হঠাৎ মেজাজের পরিবর্তন। 

  • নিদ্রাহীন থাকা, ঘুম আসলেও না ঘুমানো। 

  • নিজেকে অনেক বড় শক্তিশালী ও ক্ষমতাশালী মনে করা। 

  • মনোযোগ হারিয়ে ফেলা এবং যৌন স্পৃহা বেড়ে যাওয়া। 

  • নিজের জিনিসপত্র অন্যদের কাজে বিলিয়ে দেওয়া। 

  • বাড়তি উচ্ছ্বাস প্রবণতা এবং অযৌক্তিক কথা বলা ও চিন্তাভাবনা করা। 




ডিপ্রেশন ডিজঅর্ডার 

ম্যানিয়ার একদম বিপরীতমুখী হলো ডিপ্রেশন ডিসঅর্ডার। একই ব্যক্তি পরস্পর বিপরীতমুখী মানসিক পরিবর্তনে ভোগেন বলেই বাইপোলার ডিসঅর্ডার বলা হয়ে থাকে। 

  • দীর্ঘদিন বা দীর্ঘসময় ধরে হতাশায় ও বিষণ্ণতায় ভোগা।

  • আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া। নিজের সিদ্ধান্ত নিতে না পারা। 

  • নিজেকে তুচ্ছ ও ক্ষুদ্র মনে করা। 

  • আত্মহত্যার প্রবণতা, মরে যেতে চাওয়া। জীবনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলা। 

  • স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া। মনোযোগ হারিয়ে ফেলা। 

  • অপরাধ-বোধ মনে করা, নিজেকে দোষী ভাবতে শুরু করা। 

  • খুব ভোরে ঘুম ভেঙে যাওয়া। ক্লান্ত-বোধ করা এবং আগ্রহ হারিয়ে ফেলা। 

  • যে কোনো কারণেই উদ্বিগ্ন হয়ে যাওয়া। 



বাইপোলার ডিসঅর্ডার কিভাবে বুঝবেন? 


সাধারণত যারা এই রোগে আক্রান্ত তারা একজন স্বাভাবিক মানুষের মতোই আচরণ করলেও এদের আচরণের মাধ্যমেই এই রোগের প্রকাশ পায়। তবে সময়-অপেক্ষা কারো কারো ক্ষেত্রে এই আচরণ খুব দ্রুত আবার কারো কারো ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ধরে এটি লক্ষ্য করা যায়। 


তবে, দুই সপ্তাহ বা এর বেশি সময় ধরে হতাশা, বিষণ্ণতায় ভুগলে বা চরম উচ্ছ্বাসে ভুগলে তখন বাইপোলার ডিসঅর্ডার বলে ধারণা করা যেতে পারে। 


বাইপোলার ডিসঅর্ডার থেকে সম্পূর্ণ মুক্তির উপায়


বাইপোলার ডিসঅর্ডার একটি মনের সমস্যা যা বিভিন্ন উত্তেজনা-দি স্থিতি বা মন্দতা স্তরের মধ্যে পরিবর্তন হয়ে থাকে। সঠিক সময়ে এই রোগটি শনাক্ত করার পর মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এর থেকে পরামর্শ অনুযায়ী ধৈর্য সহকারে ঔষধ সেবন করলে বাইপোলার ডিসঅর্ডার রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। 

বাইপোলার ডিসঅর্ডার দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য চিকিৎসা একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া হতে পারে এবং  কখনো কখনো এই রোগের চিকিৎসার জন্য আক্রান্ত ব্যক্তি কে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করার প্রয়োজন হয়।

সময়মত চিকিৎসা না হলে, সম্পদ বিনষ্ট, মাদকাসক্তি, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে লিপ্ত হয়ে যাওয়া এমন কি আত্মহত্যা বা হত্যার মতো যে কোনো অপরাধমূলক কাজে নিজেকে জড়িয়ে নিতে পারে এরা। আর তাই বাইপোলার ডিসঅর্ডারের মত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাথে ভালো আচরণ ও সচেতন থাকতে হয়। তাদের সাথে সহানুভূতি বিনিময় করেও এই রোগ কে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ চিকিৎসা গ্রহণ নাও করতে হতে পারে। শুধুমাত্র ডাক্তারের কিছু পরামর্শ মেনে চললে আপনি আপনার জীবনে বাইপোলার ডিসঅর্ডার থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পেতে পারেন।


বাইপোলার ডিসঅর্ডার চিকিৎসা নিরাময়

ডাঃ মেষলা সরকার বলেন যে, বাইপোলার ডিসঅর্ডার এর লক্ষ্মণ গুলো দুই সপ্তাহ বা এর বেশি সময় ধরে দেখা গেলে মনোযোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য। কেননা বাইপোলার ডিসঅর্ডার চিকিৎসা একটি দক্ষতামূলক প্রক্রিয়া যা সাধারণত একটি সমন্বিত চিকিৎসা পরিকল্পনা ব্যবহার করে করা হয়।


বাইপোলার ডিসঅর্ডার চিকিৎসার জন্য কিছু চিকিৎসামূলক পদক্ষেপ


বাইপোলার ডিসঅর্ডার একটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যা মানসিক স্বাস্থ্য সেবা সেক্টরে খুবই সাধারণ। এটি অনেক কারণের ফলে হয়ে থাকে, যেমন নিরাপত্তা সমস্যা, জীবনের পরিবর্তনের সাম্যতা ইত্যাদি। কিছু চিকিৎসামূলক পদক্ষেপ নিম্নে উল্লেখ করা হলো


  • চিকিৎসার পরিকল্পনা: একটি সঠিক চিকিৎসার পরিকল্পনা বাইপোলার ডিসঅর্ডার চিকিৎসার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন চিকিৎসক অবশ্যই প্রথমে রোগীর মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন এবং পরবর্তী চিকিৎসার জন্য পরামর্শ দিবেন। 


  • চিকিৎসার পদক্ষেপ: বাইপোলার ডিসঅর্ডার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসার পদক্ষেপগুলি হলো দয়া এবং অবসর প্রদান করা, মানসিক চিকিৎসা, চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাপত্তা বিষয়টি সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়া।


দুটি পদক্ষেপ বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:


১) দয়া এবং অবসর প্রদান করা: বাইপোলার ডিসঅর্ডার রোগীদের দয়া এবং সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে। তারা সময় মতো পরিবর্তন করতে পারে এবং তাদের একটি পরিস্থিতি থেকে আরেকটি পরিস্থিতি  তে যাওয়া সম্ভব। সম্ভবত তারা সংকটে জড়িত হতে পারেন এবং সেক্ষেত্রে তাদের জন্য দয়া ও সহায়তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, রোগীদের জন্য অবসর সময় প্রদান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেটি হতে পারে রোগীদের কিছুর প্রতি মনোযোগ দেওয়া অথবা উন্নয়নের জন্য।

২) মানসিক চিকিৎসা: একটি ব্যক্তি যখন বাইপোলার ডিসঅর্ডার সমস্যার সম্মুখীন হয়, তখন মানসিক চিকিৎসার মাধ্যমে তাকে ভাল করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। সাধারণত মানসিক চিকিৎসা হতে পারে পরিবর্তনশীল ব্যবহার ও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত পরামর্শ দেওয়া। মানসিক চিকিৎসার মাধ্যমে একটি ব্যক্তি পজিটিভ সম্পর্কে উন্নয়ন করতে পারে এবং তাদের জীবনের গুণগত মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন করতে পারে।

বাইপোলার ডিসঅর্ডার চিকিৎসার জন্য আরও কিছু পদক্ষেপ হতে পারে, যা নিম্নরূপ:


ঔষধ চিকিৎসা: বাইপোলার ডিসঅর্ডার চিকিৎসার জন্য ঔষধ চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে। সাধারণত লিথিযম প্রদর্শিত হয়। এছাড়াও, এন্টিপ্সাইকোটিক দ্রব্য ও অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট দ্রব্যগুলি পরিচালিত হতে পারে।


পরিবর্তনশীল জীবনযাপন: বাইপোলার ডিসঅর্ডার রোগীদের জন্য একটি পরিবর্তনশীল জীবনযাপন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি নিয়মিত দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ হতে পারে। একটি নির্দিষ্ট পরিবর্তনশীল জীবনযাপন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে রোগীদের শান্তি এবং সমস্যার সমাধান করার জন্য সাহায্য করতে পারে।


শেষকথা

বাইপোলার ডিসঅর্ডার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে এই ব্লগের মাধ্যমে। আশাকরি এই ব্লগের মাধ্যমে বাইপোলার ডিসঅর্ডার সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা ইতিমধ্যে আপনি পেয়েছেন এবং এই ব্লগটি আপনার পছন্দ হয়েছে। 

আমাদের এই ব্লগের মাধ্যমে আমরা চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মিত আর্টিকেল পাবলিশ করে যাচ্ছি এবং আগামী দিনেও আমাদের এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আমরা আশাবাদী।